Dhaka ০৮:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন:
আপনাদের ভালোবাসা ও আস্থার সাথে এগিয়ে চলছে দৈনিক বঙ্গচিত্র। দেশের প্রতিটি প্রান্তের খবর, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, শিক্ষা, খেলাধুলা ও বিনোদনসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ আমরা আপনাদের কাছে পৌঁছে দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

খাদিজাতুল কুবরাকে সম্মাননা দিল জবি

||রনজিৎ চন্দ্র রায়, জবি ||

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা কে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অবস্থান ও দৃঢ় মানসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মাননা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

রবিবার (২৬ অক্টোবর) ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস–২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাঁকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।

২০২০ সালের অক্টোবর মাসে খাদিজাতুল কুবরা ‘হিউম্যানিটি ফর বাংলাদেশ’ নামে একটি অনলাইন টকশো হোস্ট করেন। সেখানে কানাডাভিত্তিক এক সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসিনা সরকারের সমালোচনামূলক কিছু মন্তব্য করেন।

এই ঘটনার জের ধরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (ডিএসএ) কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় তাঁর বিরুদ্ধে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়। তখন খাদিজার বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর, অর্থাৎ তিনি একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক। কিন্তু মামলায় তাঁকে ২২ বছর হিসেবে দেখানো হয়। মামলার প্রায় দুই বছর পর, ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তিনি প্রায় ১৫ মাস কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে বন্দী ছিলেন।

এই সময়ে তাঁর একাধিকবার জামিন আবেদন করা হলেও আদালত তা প্রত্যাখ্যান করে। এমনকি কিডনি সংক্রান্ত শারীরিক জটিলতা উল্লেখ করেও জামিন মেলেনি। কারাগারে থেকেও তিনি স্নাতক পরীক্ষায় অংশ নেন, কিন্তু সেখানে তাঁকে জেরার মুখে পড়তে হয় এবং পরীক্ষার ফলাফলেও প্রভাব পড়ে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ দেশি–বিদেশি সংগঠনগুলো তাঁর মুক্তির দাবি জানায়।

অবশেষে ২০২৩ সালের ২০ নভেম্বর তিনি সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পান এবং ২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল তাঁকে দুই মামলাতেই সম্পূর্ণ অব্যাহতি প্রদান করে।

সম্মাননা গ্রহণকালে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে খাদিজা বলেন, “আমি কী এমন করেছিলাম যার সাজা আমাকে ভোগ করতে হলো? আমি কারাগার থেকে সরাসরি এসেও পরীক্ষা দিয়েছি, আমার জীবনের যে ক্ষতি হয়ে গেছে—তা আর পূরণ হওয়ার নয়।”

তিনি আরও যোগ করে বলেন, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন আর কোনো শিক্ষার্থীর জীবনে না ঘটে এবং এই লক্ষ্যে সে ভবিষ্যতে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: রেজিউল করিম বলেন, “খাদিজাতুল কুবরা এক আলোর প্রতীক। তিনি সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন ফ্যাসিবাদীর মুখোশ। তাঁর ঘটনা শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অবস্থানের এক অনন্য প্রতীক।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা চাই, তাঁর জীবনের ক্ষতি যেন অন্তত শিক্ষা ও মর্যাদার মাধ্যমে পূরণ করা যায়। আল্লাহ তাঁকে শক্তি ও তৌফিক দান করুন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁর পাশে থাকবে।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি, মানবিক অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। দিনব্যাপী আলোচনায় মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা হয়। শেষে খাদিজাতুল কুবরাকে “মানবাধিকার সচেতনতা ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান” এর স্বীকৃতিস্বরূপ বিশেষ সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।

খাদিজাতুল কুবরার এই সম্মাননা কেবল একটি বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কার নয়, এটি একটি ন্যায় ও মানবাধিকারের জন্য লড়াই ফ্যাসিবাদ বিরোধী প্রতীকি বার্তা।

#আরইউএস

Popular Post

খাদিজাতুল কুবরাকে সম্মাননা দিল জবি

Update Time : ১১:৫৩:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

||রনজিৎ চন্দ্র রায়, জবি ||

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা কে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অবস্থান ও দৃঢ় মানসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মাননা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

রবিবার (২৬ অক্টোবর) ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস–২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাঁকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।

২০২০ সালের অক্টোবর মাসে খাদিজাতুল কুবরা ‘হিউম্যানিটি ফর বাংলাদেশ’ নামে একটি অনলাইন টকশো হোস্ট করেন। সেখানে কানাডাভিত্তিক এক সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসিনা সরকারের সমালোচনামূলক কিছু মন্তব্য করেন।

এই ঘটনার জের ধরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (ডিএসএ) কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় তাঁর বিরুদ্ধে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়। তখন খাদিজার বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর, অর্থাৎ তিনি একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক। কিন্তু মামলায় তাঁকে ২২ বছর হিসেবে দেখানো হয়। মামলার প্রায় দুই বছর পর, ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তিনি প্রায় ১৫ মাস কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে বন্দী ছিলেন।

এই সময়ে তাঁর একাধিকবার জামিন আবেদন করা হলেও আদালত তা প্রত্যাখ্যান করে। এমনকি কিডনি সংক্রান্ত শারীরিক জটিলতা উল্লেখ করেও জামিন মেলেনি। কারাগারে থেকেও তিনি স্নাতক পরীক্ষায় অংশ নেন, কিন্তু সেখানে তাঁকে জেরার মুখে পড়তে হয় এবং পরীক্ষার ফলাফলেও প্রভাব পড়ে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ দেশি–বিদেশি সংগঠনগুলো তাঁর মুক্তির দাবি জানায়।

অবশেষে ২০২৩ সালের ২০ নভেম্বর তিনি সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পান এবং ২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল তাঁকে দুই মামলাতেই সম্পূর্ণ অব্যাহতি প্রদান করে।

সম্মাননা গ্রহণকালে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে খাদিজা বলেন, “আমি কী এমন করেছিলাম যার সাজা আমাকে ভোগ করতে হলো? আমি কারাগার থেকে সরাসরি এসেও পরীক্ষা দিয়েছি, আমার জীবনের যে ক্ষতি হয়ে গেছে—তা আর পূরণ হওয়ার নয়।”

তিনি আরও যোগ করে বলেন, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন আর কোনো শিক্ষার্থীর জীবনে না ঘটে এবং এই লক্ষ্যে সে ভবিষ্যতে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: রেজিউল করিম বলেন, “খাদিজাতুল কুবরা এক আলোর প্রতীক। তিনি সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন ফ্যাসিবাদীর মুখোশ। তাঁর ঘটনা শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অবস্থানের এক অনন্য প্রতীক।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা চাই, তাঁর জীবনের ক্ষতি যেন অন্তত শিক্ষা ও মর্যাদার মাধ্যমে পূরণ করা যায়। আল্লাহ তাঁকে শক্তি ও তৌফিক দান করুন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁর পাশে থাকবে।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি, মানবিক অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। দিনব্যাপী আলোচনায় মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা হয়। শেষে খাদিজাতুল কুবরাকে “মানবাধিকার সচেতনতা ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান” এর স্বীকৃতিস্বরূপ বিশেষ সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।

খাদিজাতুল কুবরার এই সম্মাননা কেবল একটি বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কার নয়, এটি একটি ন্যায় ও মানবাধিকারের জন্য লড়াই ফ্যাসিবাদ বিরোধী প্রতীকি বার্তা।

#আরইউএস