
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে, নেপাল এক গভীর রাজনৈতিক সংকটে পড়ে, যার ফলস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেন। এই ঘটনা দ্রুতগতিতে ঘটে যায়—ডিজিটাল সেন্সরশিপ, তরুণদের আন্দোলন, এবং দীর্ঘদিনের শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতা এই পতনের মূল কারণ।
নেপালে সরকার পতনের পেছনের বিশেষ কারণসমূহ
১. সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা (৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫)
সরকার নতুন নিয়মে নিবন্ধন না করায় ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এক্স (টুইটার) সহ ২৬টি জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করে। এতে দেশের মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ক্ষোভে ফেটে পড়ে। নেপালে তরুণদের বিদ্রোহ যেন থামছে না! প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া প্রতিবাদ এখন দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। অনেকেই জীবন হারিয়েছেন, তবু তারা থেমে নেই। অধিকার আর সুযোগের জন্য এই লড়াই চলছে আরও জোরালো করে!

২. জেনারেশন জেড-এর নেতৃত্বে গণআন্দোলন
এই সেন্সরশিপকে তরুণ সমাজ মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর আঘাত হিসেবে দেখে। ফলে রাজধানী কাঠমাণ্ডু সহ বড় বড় শহরে বিশাল প্রতিবাদ শুরু হয়।নেপালে চলমান বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু ছিল দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ। সেখানে ‘নেপো কিডস’ হ্যাশট্যাগটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক নেতারা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা একদিকে বিলাসবহুল জীবন কাটাচ্ছেন, আর অন্যদিকে সাধারণ মানুষ ন্যূনতম জীবনযাত্রার জন্য লড়াই করছে।

৩. নির্মম পুলিশি দমন
সরকার প্রতিবাদকারীদের উপর টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট এবং এমনকি সরাসরি গুলি চালায়। এতে কমপক্ষে ১৯ জন নিহত এবং শত শত মানুষ আহত হয়। জনরোষ আরও বেড়ে যায়।

৪. ব্যাপক সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা
নেপালে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের পর সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমন করা হলে, মঙ্গলবার প্রতিবাদকারীরা দেশের সংসদ ভবনে ঢুকে সেখানে আগুন ধরিয়ে দেয়, একটি সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার বাড়িতে আগুন দেয়। এয়ারপোর্ট, পরিবহন ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে।
সংসদ সচিবালয়ের মুখপাত্র একরাম গিরি এএফপিকে বলেন, “শত শত বিক্ষোভকারী সংসদ এলাকা ভেঙে প্রবেশ করে প্রধান ভবনটিতে আগুন জ্বালিয়েছে।”
৫. নেতৃত্বের পদত্যাগ
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে, প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সালে পদত্যাগ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখকও পদত্যাগ করেন। একই সাথে একটি ১৫ দিনের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
রাষ্ট্রপতির প্রেস উপদেষ্টা কিরণ পোখরেল জানান, সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নতুন ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র ও সাধারণ জনগণের বিক্ষোভ দ্বিতীয় দিনে গড়িয়েছে। রাজধানীর কিছু অংশে অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি থাকা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা এবং অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের বাসভবনে হামলা চালান।বিমানবন্দর নির্মাণে জালিয়াতি, নেপাল টেলিকমে অর্থ আত্মসাৎ এবং অভিবাসন দপ্তরে চাঁদাবাজির মতো ঘটনাগুলো দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সোনা চোরাচালান ও ভুয়া শরণার্থী কেলেঙ্কারিতেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সংশ্লিষ্টতা সামনে এসেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা বলছে—বড় নেতারা আইনের আওতায় আসেন না। তদন্ত প্রক্রিয়া দীর্ঘ হয়, নিচু পর্যায়ের কর্মীদের শাস্তি দেওয়া হয়, অথচ প্রভাবশালীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান।